মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবো
মা হওয়ার সুখ এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ। গর্ভাবস্থায়, একজন মহিলার শরীরে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনগুলি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়, যা প্রত্যেকেরই জানা উচিত। গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত কোনো সমস্যার জন্য, আমরা আপনাকে আমাদের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিই।
আপনি যদি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য বিশেষ। এই ব্লগে, আমরা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব।
প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ:
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রেগনেন্সি একটি সুন্দর অনুভূতি। এই অবস্থার কিছু প্রাথমিক লক্ষণও রয়েছে যা থেকে প্রেগনেন্সির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আসুন প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণগুলি বিশদে জানি ও বুঝি –
- পিরিয়ড মিস হওয়া: পিরিয়ড মিস হওয়াকে আপনি প্রেগনেন্সির প্রথম লক্ষণ বলতে পারেন। যদি অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের আগে পিরিয়ড নিয়মিত থাকে এবং সম্পর্কের পরে পিরিয়ড মিস হয়ে যায়, তবে এটি প্রেগনেন্সির দিকে ইঙ্গিত করে।
- স্তনগুলিতে সংবেদনশীলতা: প্রেগনেন্সির কারণে স্তনে পরিবর্তন হয়, যা স্বাভাবিক। স্তনে ফোলাভাব, ব্যথা এবং সংবেদনশীলতা প্রেগনেন্সির একটি লক্ষণ। এর সঙ্গে নিপল (এরিওলা) এর রঙ ও আকারেও পরিবর্তন দেখা যায়।
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: প্রেগনেন্সির সময় প্রোজেস্টেরন নামে হরমোনের স্তর শরীরে বেড়ে যায়। এর ফলে মহিলাকে ক্লান্তি এবং দুর্বলতার সম্মুখীন হতে হয়।
- বমি ভাব ও বমি আসা (মর্নিং সিকনেস): প্রেগনেন্সির সময় শরীরে অনেক হরমোনাল পরিবর্তন হয়, যার ফলে মহিলার সারাদিন বমি ভাব ও বমির সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় মর্নিং সিকনেস বলা হয়।
- বারবার প্রস্রাব করা: প্রেগনেন্সির সময় গর্ভাশয়ের কারণে ব্লাডারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে বারবার প্রস্রাব করতে ইচ্ছে করে। এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ, যা ক্রমাগত থাকতে পারে।
- ক্ষুধার পরিবর্তন: প্রেগনেন্সির সময় ক্ষুধায় অনেক ওঠানামা হয়। অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে বেশি বা কম ক্ষুধা লাগা প্রেগনেন্সির একটি প্রাথমিক লক্ষণ।
- পেটে কড়কানি বা ফোলা: প্রেগনেন্সির সময় শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়, যার ফলে মহিলার পেটে হালকা ব্যথা, কড়কানি বা ফোলাভাব হতে পারে।
- মুড সুইং: সাধারণত পিরিয়ডের সময় মুড সুইং দেখা যায়, তবে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে যদি পিরিয়ড মিস হয় এবং হঠাৎ মুড সুইং হয়, তবে এটি প্রেগনেন্সির ইঙ্গিত দেয়।
এই সবের অতিরিক্ত কিছু অন্যান্য লক্ষণও মহিলারা অনুভব করতে পারেন যেমন –
- স্পটিং (যা ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বলা হয়)
- মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
- প্রেগনেন্সির প্রাথমিক দিনগুলিতে নাক বন্ধ থাকা
- পেট ফোলা
- ত্বকের পরিবর্তন
এগুলির বেশিরভাগ লক্ষণ প্রেগনেন্সির পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে, তাই লক্ষণ দেখা দিলে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করুন বা আমাদের গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন।
গর্ভাবস্থার মাসিক লক্ষণ
প্রেগনেন্সির বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়, যা জানা জরুরি। আসুন প্রতিটি মাসের লক্ষণগুলি জানি –
- প্রথম মাস: স্তনে ফোলাভাব ও ব্যথার সঙ্গে ক্লান্তি, অসুস্থতা ও বমি প্রেগনেন্সির প্রথম মাসের লক্ষণ।
- দ্বিতীয় মাস: পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস এবং মুড সুইং প্রেগনেন্সির দ্বিতীয় মাসের লক্ষণ।
- তৃতীয় মাস: ওজন বৃদ্ধি এবং পেটের বৃদ্ধি তৃতীয় মাসের লক্ষণ। এই সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলি ঘটে।\
- চতুর্থ মাস: পেটে শিশুর নড়াচড়া অনুভব হওয়া এবং মুখের উজ্জ্বলতা গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসের লক্ষণ।
- পঞ্চম মাস: এই সময় শিশুর নড়াচড়া আরও স্পষ্ট হবে এবং মহিলারা বেশি ক্লান্তি অনুভব করবেন।
- ষষ্ঠ মাস: প্রেগনেন্সির কারণে শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে কিডনিতে ব্যথা হয়। এর অতিরিক্ত অনিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসও প্রেগনেন্সির ষষ্ঠ মাসের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
- সপ্তম মাস: এই সময় শরীর আপনাকে বাস্তব লেবারের জন্য প্রস্তুত করে। এর অতিরিক্ত শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন পা, হাত এবং মুখ ফুলে যায়।
- অষ্টম মাস: এই সময় শরীরে নড়াচড়ার সঙ্গে মহিলার স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে যায়। এই সময় আপনার ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকা উচিত।
- নবম মাস: এই সময় নিয়মিত লেবার পেন হয়, যাতে কোমর ও পেটে ব্যথা হয়। এর সঙ্গে মহিলার নালি থেকে পানি পড়া শিশুর জন্মের সময় হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।